আজ রোববার ১২ রবিউল আউয়াল বা ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। সিরাতগ্রন্থ ও ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আজকের এই দিনে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। বিশ্বের মুসলমানরা এই দিনটি উৎসবের সঙ্গে পালন করেন।
যদিও এই উৎসব নিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদদের মাঝে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়ালের বারো তারিখে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশি মুসলমানরা এই দিনকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বলে অভিহিত করে থাকেন।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কাছে এই দিনটি নবী দিবস হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, নবী (সা.)-এর সময়, খোলাফায়ে রাশেদিনের সময় এমনকি তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের সময়েও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে কোনো উৎসবের প্রচলন ছিল না। ইসলামি ঐতিহাসিকরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।
আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে মুসলমানদের প্রধান দুই ঈদ উৎসবের বাইরে কোনো দিনকে সামাজিকভাবে উদযাপন শুরু হয় হিজরি ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে। সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরিতে (৯৬৩ খ্রি.) বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার প্রধান প্রশাসক ও রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক বনী বুয়াইহির শিয়া শাসক মুইজলি দীনিল্লাহ্ ১০ মহরম আশুরাকে শোক দিবস ও জিলহজ মাসের ৮ তারিখ ‘গাদীরে খুম’ দিবস হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে এই দুই দিবস সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করার ক্ষেত্রেও শিয়ারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বলে জানা যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মিসরের ফাতেমীয় শাসকরা মিলাদুন্নবী উদযাপন করতেন এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রচলন শুরু হয় হিজরি ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। রাসুল (সা.), হজরত আলী (রা), হজরত ফাতিমা (রা), ইমাম হাসান (রা) ও ইমাম হুসাইন (রা)-এর জন্মোৎসব উদযাপনের মূল প্রবর্তক ছিলেন খলিফা মুইজলি দীনিল্লাহ্।
ইবনে জারীর দেয়া তথ্যমতে, আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে বাদশাহ্ হারুনুর রশীদের মাতা খায়জুরান বিবি ১৭৩ হিজরিতে মদিনা শরিফে নবী (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা এবং সেখানে দুরুদ ও দোয়া পাঠ করার ব্যবস্থা চালু করেন। পরবর্তীকালে ১২ রবিউল আউয়ালে প্রতিবছর নবী (সা.)-এর জন্মদিবস ধরে নিয়ে ওই ঘরে আনন্দোৎসব পালন করা শুরু হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রবর্তক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ছিলেন, ইরাকের ইরবিল প্রদেশের শাসক আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দীন কুকুবুরী। তিনিই প্রথম সুন্নিসহ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রবর্তন করেন। এই দিবসটি উদযাপন নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের পক্ষাবলম্বীরা তাদের মতের সপক্ষে দলিল হিসেবে সুরা আলে ইমরানের ৮১নং আয়াতটি উল্লেখ করেন।
এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে প্রিয় রাসুল! আপনি স্মরণ করুন ওইদিনের ঘটনা যখন আল্লাহপাক আম্বিয়ায়ে কিরামদের কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, তোমাদের কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার প্রত্যয়নকারীরূপে যখন একজন রাসুল আসবেন তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ইমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে।’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।